দেশে রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অনেক শিশু, নেই শনাক্তের ব্যবস্থা
সারা দেশের জেলা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া নিয়ে অনেক শিশু ভর্তি হচ্ছে। লক্ষণ দেখে চিকিৎসকেরা বলছেন, অনেক শিশু রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু এসব হাসপাতালে রোটাভাইরাস শনাক্তের ব্যবস্থা নেই।
কোনো কোনো হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের এই তীব্র শীতেও মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে।
না বুঝে ভুলভাবে তৈরি করা স্যালাইন শিশুকে খাওয়ানো হয়েছে এমন নজিরও আছে। বরিশাল, কুমিল্লা, ময়মনসিংহের সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
সারা দেশে শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের মতো মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে শিশু বেশি। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২ হাজার ১৯২ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই হিসাবের মধ্যে আইসিডিডিআরবি, মহাখালী ও মতলব হাসপাতালের তথ্য নেই।
রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়া মূলত ছোট বাচ্চাদের হয়ে থাকে। শুরুতে অল্প জ্বর, বমি থাকে। তারপর বারবার হলুদ রঙের পাতলা পায়খানা হয়। অনেক সময় পায়খানার জায়গার আশপাশে লালচে হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে শিশুরা ব্যথা অনুভব করে। টিকা দিয়ে রোটাভাইরাস প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
গত ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৯ মাস বয়সী শিশু রাফসানকে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর অল্প পরিমাণ পানিতে এক প্যাকেট স্যালাইন গুলে শিশুটিকে খাওয়ানো হয়। ঘনত্ব বেশি হওয়ায় শিশুটির শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে তার কিডনি কার্যকারিতা হারিয়েছে। শিশুটির শরীর ফুলে গেছে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার চকরাধাকানাই গ্রামের এই শিশুকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন কঠিন হয়ে গেছে। বাবা শাহীন ইসলাম গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন।
শিশুটির মা রুবি আক্তার বলেন, আগে জানলে সন্তানের এত বড় ক্ষতি হতো না।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের ৩১ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটে প্রতিদিন রোগী ভর্তি করা হয়। শীতের তীব্রতা বাড়ায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর পরিমাণ বাড়ছে। গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩৫০ শিশু ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ বছর বয়সের বেশি শিশু ছিল মাত্র তিনটি। এই সাত দিনে শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত কোনো শিশুর মৃত্যু হয়নি।
শিশু বিভাগে হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার মাজহারুল আমিন বলেন, ‘আমরা রোগীর লক্ষণ ও ইতিহাস শুনে বুঝতে পারি সেটা রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়া কিনা। এটি পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও ময়মনসিংহে নেই। রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় শিশুরা পানিস্বল্পতায় ভুগে। অভিভাবকেরা নিয়ম অনুযায়ী স্যালাইন না খাওয়ার ফলে সমস্যা বাড়ে।’
শিশু বিভাগের তিনটি ইউনিট ঘুরে দেখা গেছে রোগীতে ঠাসা। বারান্দা, লিফটের সামনেসহ সর্বত্র শিশুদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন অভিভাবকেরা।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জামশেদ আলম বলেন, ‘রোটাভাইরাস শনাক্তের পদ্ধতি স্থানীয়ভাবে সহজ নয়। আমরা নমুনা সংগ্রহ করে আইসিডিডিআরবিতে পাঠাই। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’
রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়া মূলত ছোট বাচ্চাদের হয়ে থাকে। শুরুতে অল্প জ্বর, বমি থাকে। এরপর বারবার হলুদ রঙের পাতলা পায়খানা হয়। অনেক সময় পায়খানার জায়গার আশপাশে লালচে হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে শিশুরা ব্যথা অনুভব করে।