বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন

রাবিতে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটি, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

অনলাইন ডেঙ্ক / ৯ দেখেছেন:
আপডেট : রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক পাঁচটি হলে পবিত্র কোরআনের পোড়া কপি পাওয়া গেছে। রোববার সকালে পোড়া কোরআন শরীফ পাওয়ার পর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দিন খানকে আহবায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পবিত্র কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসে কোরআন শরীফ পোড়ানোর ঘটনায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব। তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের শনাক্ত করতে পারলে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এ ঘটনায় অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের মাঝে মুক্তমঞ্চে, শহীদ হবিবুর রহমান, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের মসজিদের তাকে এবং মতিহার ও মাদার বখ্শ হলের ছাদে পোড়া কোরআন শরিফ পাওয়া যায়। এ ছাড়া জিয়াউর রহমান হলে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির দলীয় প্রতীক (পদ্ম ফুল) আঁকা দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাকর্তারা ওই সব জায়গা পরিদর্শন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মচারী-কর্মকর্তাদের প্রতি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য আরও বলেন, এই ন্যাক্কার জনক ঘটনার জন্য যা কিছু করার লাগে আমরা করব। এটা একটি উস্কানি ও গভীর ষড়যন্ত্র। আমরা এই ষড়যন্ত্রে পা না দিয়ে এর জঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে চাই। ঘটনাটা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটনা হয়েছে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এ ঘটনায় দোষীদের খুব দ্রুত খুঁজে বের করা হবে।

উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, এ ঘটনায় আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষরা নিজ নিজ জায়গা থেকে থানায় অভিযোগ দেবেন। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রধান করা হয়েছে সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) মোহা. ফরিদ উদ্দিন খানকে। এই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট হলগুলোর প্রাধ্যক্ষও থাকবেন।

উপাচার্য আরও বলেন, ‘একই গোষ্ঠী সম্ভবত একই সময়ে রাতের আঁধারে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট, তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ইতিহাস আছে, সেই জায়গা থেকে আমাদের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আবেগ–অনুভূতিতে আঘাত হেনে সেই সম্প্রীতির জায়গাটা বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য সালেহ্ হাসান বলেন, ‘ঘটনাটা পূর্বপরিকল্পিত মনে হচ্ছে। চারটি হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্যাটার্নও একই রকম। একইভাবে পবিত্র কোরআন শরিফে আগুন দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত নিচু প্রকৃতির ন্যক্কারজনক কাজ।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘আমার ছাত্রছাত্রীদের ধন্যবাদ দিতে চাই, তারা এ ধরনের একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে সামনে রেখে অত্যন্ত ধৈর্য, সহশীলতা ও শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। এই ধরনের ঘটনা ঘটার পরেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে সম্প্রীতি এবং যে সম্পর্ক, আমরা সেটাকে অটুট দেখতে পাচ্ছি। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখনো ঘটেনি। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট শ্রেণির মানুষ।

‘তাদের একটি মাত্র উদ্দেশ্য, আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্প্রীতির জায়গাটা নষ্ট করা এবং একটা উসকানি ও হানাহানি তৈরি করা। এটাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা জরুরি সভা করা হয়েছে। সেখানে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। যারা দোষী, তাদের খুব দ্রুত বের করা হবে।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ হাজারের মতো পরিবারের সদস্য। বেশির ভাগই ছাত্রছাত্রী। তাঁদের মধ্যে যে সম্পর্ক, এটাকে যেন কারও উসকানি এবং খুব খারাপ ধরনের মানুষের ফাঁদে পা দিয়ে নষ্ট না করা হয়। আমরা এ ব্যাপারে বদ্ধপরিকর যে আমাদের ছেলেমেয়েরা শান্তিতে থাকবেন। তাদের ভেতরে ভালো সম্পর্ক থাকবে। কোনো নোংরা কাজে, যে ফাঁদ পাতা হয়েছে, সেখানে পা দেবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) ফরিদ উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পবীত্র কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিকেলে প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা সিনেট ভবনের সামনে সমাবেশ করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করে শাস্তিার দাবি জানান।

এদিকে, পাঁচটি আবাসিক হলে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেকোনো সময় পরিচয়পত্র দেখতে চাইতে পারে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন মজুমদার।

তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে রাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের বিনা অনুমতিতে প্রবেশ ও অবস্থান নিষিদ্ধ করে দেওয়া পূর্বের নিষেধাজ্ঞা যথারীতি বহাল আছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো দেখুন..
এক ক্লিকে বিভাগের খবর