বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন

ধানের আবাদে চিন্তার ভাঁজ বরেন্দ্রের কৃষকের

অনলাইন ডেঙ্ক / ১২ দেখেছেন:
আপডেট : রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

সেচের জন্য গভীর নলকূপ গুলোতে নির্দিষ্ট ঘন্টা বেঁধে দেওয়া, ধান চাষে নিরুৎসাহিত করা, নলকূপে অপারেটন নিয়োগে নতুন নীতিমালাসহ বেশ কিছু কারণে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে ধানের আবাদ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের।

জানা গেছে, বর্তমান বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নতুন চেয়ারম্যান ড. এম. আসাদুজ্জামান দায়িত্ব নেওয়ার পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ হিসেবে জানা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রবি মৌসুমে আবাদে ধানের প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই ধান বাদে কম পানি লাগে যেমন, গম, ভূট্টাসহ অন্যান্য ফসল ফলানোর জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে করে পানির ব্যবহার যেমন কমবে অন্যদিকে ফসল উৎপাদন ঠিক থাকবে।

হঠাৎ এমন সিন্ধান্তে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে ধান আবাদে অভ্যস্ত থাকায় হঠাৎ করে অন্য ফসল আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আবার কোন কোন কৃষক ধান বাদ দিয়ে গম, ভূট্টা চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করলেও গভীর নলকূপে অপারেটরদের কারণে অনেকে তা লাগাতে পারেন নি। কৃষকরা অভিযোগ করছেন নলকূপ গুলোতে এবারের মৌসুমে নির্দিষ্ট ঘন্টা বেঁধে দিয়ে আবাদ শেষ করার কথা জানিয়েছে। তাই এই নির্দিষ্ট ঘন্টা মোতাবেক পানি দিতে পারবে না এ কারণে অপারেটরেরা গম-ভূট্টা আবাদ করতে দেয়নি।
গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কৃষক ইব্রাহীম বলেন, আমি জলাহার এলাকায় প্রতিবার ভূট্টা আবাদ করি। নতুন ভাবে গমও আবাদ করার জন্য প্রস্তুতি গহণ করি। কিন্তু নলকূপে অপারেটর তাকে নিষেধ করে। কারণ হিসেবে বলে এই মৌসুমে নলকূপে ৯৮০ ঘন্টা বেঁধে দিয়ে আবাদ শেষ করতে বলা হয়েছে বিএমডিএর পক্ষ থেকে তাই বেশী আবাদ হয়ে যাওয়ায় তা করতে দেয়নি। এবার গম-ভূট্টা দুটোই আবাদ না করতে পেরে বিপাকে পড়েছে ওই কৃষক।

ফলে শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত বরেন্দ্র অঞ্চলে আবাদ কমার শঙ্কা করছেন কৃষকরা। যদিও বিএমডিএ বলছে, অপারেটর নিয়োগে দুর্বৃত্তায়ন কমানোর লক্ষ্যেই নতুন নীতিমালা। এদিকে, নতুন এই নীতিমালা বোর্ড সভায় আলোচনা ছাড়াই কর্তৃপক্ষ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হিরোক। তিনি বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত বোর্ড সভায় আলোচনা করে নিলে বিতর্ক হতো না। চেয়ারম্যান একাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সার্কুলার দিয়েছেন। বোর্ড সভায় এনিয়ে কথা বলব। কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, তেমন সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখব।’

নতুন নীতিমালায় অপারেটর হতে চাইলে পুরুষের জন্য ২০ হাজার টাকা ও নারীদের জন্য ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য ছিল সাড়ে ৭ হাজার টাকা। নারী-পুরুষ উভয়কে গভীর নলকূপের ঘরে রাতেও থাকা বাধ্যতামূলক, অপারেটরের শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে এসএসসি পাস, ফরমের দাম ১০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার। কমানো হয়েছে নলকূপ চালানোর সময়। এতে করে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে, দাবি চাষিদের।

কৃষক নাজিমুদ্দিন বলেন, আগে বরেন্দ্র থেকে কার্ড নিয়ে ইচ্ছেমতো পানি ব্যবহার করা যেত। এক ফসলের পর আরেকটি ফসলের চাষ করতেন। কিন্তু নতুন নীতিমালায় ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ৯৮০ ঘণ্টা সেচ পাম্প চালানো যাবে। এত করে প্রভাবশালী চাষিরা তাদের জমিতে সেচ সুবিধা নিয়ে নেবেন। অল্প জমিতে চাষাবাদ করেন, এমন চাষিরা সেচ সুবিধা নাও পেতে পারেন। মঞ্জুর রহমান নামে আরেক চাষি জানান, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জামানতের নতুন যে নিয়ম করা হয়েছে, তাতে বর্তমান অপারেটররা বাদ পড়বেন। চেয়ারম্যান তার পছন্দের লোকজনকে অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দিতে এমন নিয়ম করেছেন বলে দাবি তার।

বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোনের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে আবাদ ব্যাহত হতে পারে। এই মৌসুমে ধান আবাদে বেশী পানির খরচ হয়। তাই বিএমডিএর চেয়ারম্যান স্যার ধান আবাদে নিরুৎসাহিত করে কম পানি লাগে এমন শস্য ফলানোর জন্য কৃষকদে উদ্বুদ্ধ করছেন।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, বিএমডিএর এমন সিদ্ধান্ত শস্য উৎপাদনে অন্তরায়। কারণ এতে সেচ খরচ বাড়বে। আবার প্রয়োজনীয় পানি না পেলে অনেক জমি পতিত থাকবে। এতে শস্য উৎপাদন কমে আসবে।

এদিকে, বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগে যে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, সেটি ভাঙতে নতুন নীতিমালা। এ ছাড়া এতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমবে।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আগে অপারেটর নিয়োগে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। কারও হেদায়েত হয়ে এখানে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেটি ভাঙতে নতুন নীতিমালা। এতে করে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারও কমে আসবে।’ উল্লেখ্য, বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় ১৯ হাজার গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করে বিএমডিএ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো দেখুন..
এক ক্লিকে বিভাগের খবর