বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৪ পূর্বাহ্ন

সার-বীজের সংকট বাড়াতে পারে খাদ্যশস্যের দাম

অনলাইন ডেঙ্ক / ১০ দেখেছেন:
আপডেট : বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫

এমনিতেই নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে দিশেহারা দেশের সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে সার-বীজের সংকট দেখা দেওয়ায় এসবের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে উৎপাদন ব্যয়ে, ফলে দাম বাড়তে পারে খাদ্যশস্যের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই দেশের উত্তরাঞ্চলে সারের সংকট দেখা দেয়। এখন দেশের অন্য অঞ্চলেও সংকট দেখা দিচ্ছে। সংকটের কারণে সরকারি সার এখন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বীজ ও সেচের খরচ এখন আকাশচুম্বী। এ অবস্থায় সর্বোচ্চ ফসল উৎপাদন হওয়া রবি মৌসুমে বোরো ধান, গম, আলু, সরিষাসহ অন্য ফসল চাষের খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা কৃষকদের। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় এ সংকট আরও বেশি। ডিলার, সাব-ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজিপ্রতি ২ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও মিউরেট অব পটাশসহ (এমওপি) অন্যান্য নন-ইউরিয়া সার বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন জেলার কৃষকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে ইউরিয়া সার ২৭ টাকা কেজি দরে বিক্রির কথা থাকলেও ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নন-ইউরিয়ার মধ্যে টিএসপি সার মিলছে না। মিললেও দাম নেওয়া হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি। তারা বলছেন, গত বছর এপ্রিলে একদফা সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরপর এখন সেই দামেও সার না পাওয়ায় প্রায় ৩০ শতাংশ খরচ বাড়ছে বোরোসহ বিভিন্ন রবিশস্য উৎপাদনে। যদিও ডিসেম্বরের শুরুতে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, আপাতত সারের কোনো সংকট নেই। বীজেরও সংকট হবে না। কৃষক যাতে পরামর্শসহ সার, বীজ ও পানি ঠিকমতো পায় সেজন্য সারের ব্যবহার পরিমিত পরিমাণে করতে হবে। এবিষয়ে একমত প্রকাশ করে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, এখন মজুত কম হলেও সার আমদানি প্রক্রিয়া চলমান। আমদানিতে কোনো সমস্যা নেই। ক্রমাগত সার আসবে। সারের কোনো সংকট হবে না। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সারের মজুতের তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, চলতি মৌসুমে ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সারের যে চাহিদা, সে পরিমাণ সার নেই। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নন-ইউরিয়া হিসেবে পরিচিত টিএসপি সারের ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত (চার মাস) চাহিদা তিন লাখ ৬১ হাজার টন, যেখানে মজুত আছে এক লাখ দুই হাজার টন। চাহিদার সাত লাখ ৪৪ হাজার টন ডায়ামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারের বিপরীতে মজুত এক লাখ ৩৯ হাজার টন এবং চার লাখ ১৩ হাজার টন এমওপির বিপরীতে মজুত দুই লাখ ২৯ হাজার টন। অন্যদিকে, ইউরিয়া সার শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয়কে জোগান দেয়। এর মধ্যে প্রধান এ সারের মজুতেও টানাটানি শুরু হয়েছে। জানা গেছে, বোরো মৌসুমে আগামী চার মাসে ১৪ লাখ টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন। যেখানে বিসিআইসির হাতে আছে সাত লাখ ২৫ হাজার টন। এর মধ্যে দেড় লাখ টন আমদানি করা, যা পাইপলাইনে রয়েছে। অর্থাৎ দেশে এসে পৌঁছায়নি। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সার রয়েছে তা চলতি ডিসেম্বর ও আগামী মাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তবে বিসিআইসি এও বলছে, চলতি ডিসেম্বরে দেড় লাখ মেট্রিক টন ছাড়াও জানুয়ারিতে দুই লাখ ১০ হাজার টন, ফেব্রুয়ারিতে দেড় লাখ টন ও মার্চে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া আমদানির চুক্তি রয়েছে। এসব সার এলে সংকট হওয়ার কোনো কারণ নেই। এরমধ্যে আরও কিছু দেশ থেকে ইউরিয়া আমদানির চেষ্টা চলছে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রবি মৌসুমে সারের সংকট হলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। কারণ এখন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের মূল সময়। এছাড়া চাল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় বোরো মৌসুম শুরু হচ্ছে। দ্বিতীয় খাদ্যশস্য গম ও তারপরের শস্য আলু মাঠে রয়েছে। পেঁয়াজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফসলও আছে। এ সময় মজুত সংকটে বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে, এটা খুবই দুঃখজনক। সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, এখন চলার মতো সার রয়েছে, তারপরও মজুত কম বলে সংকট তৈরি হচ্ছে। কৃত্রিম সংকটও করছেন অসাধু ডিলার ও ব্যবসায়ীরা। আবার সময় মতো যদি বিদেশ থেকে সার না আসে বড় সংকট হবে, এটা উদ্বেগজনক। এ সময় সারের সংকট হলে উৎপাদনে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যে কারণে সরকারকে দ্রুত গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।-এফএনএস

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো দেখুন..
এক ক্লিকে বিভাগের খবর