শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে অব্যাহতির পর কলেজে গিয়ে বেকায়দায় অধ্যক্ষ

অনলাইন ডেঙ্ক / ৮ দেখেছেন:
আপডেট : সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী প্রীতির অভিযোগ সামনে এসেছিল রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে। কয়েকজন শিক্ষক ও বহিরাগত কিছু মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে তখন তাকে অব্যাহতি দেয় কর্তৃপক্ষ।

তবে হাইকোর্টে ওই আদেশ স্থগিত হয়ে যাওয়ার দাবি করে কলেজে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ড. মাওলা। তিনি বলছেন, হাইকোর্ট তার অব্যাহতির ওই আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। কেন ওই আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন। যেহেতু অব্যাহতির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে, তাই তিনিই অধ্যক্ষ।

যদিও তিনি অবৈধভাবে চেয়ারে বসেছেন বলে তার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে তার বিরুদ্ধে নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।

শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজটি পরিচালনা করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। গত আগস্টেই আরএমপির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার ড. গোলাম মাওলাকে অব্যাহতি দেন। তবে অব্যাহতি দেওয়ার আগে তাকে কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি। অভিযোগের তদন্তও হয়নি।

ফলে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যান ড. গোলাম মাওলা। অবৈধভাবে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি রিট করেন। গত ১৫ ডিসেম্বর বিচারপতি আকরাম হোসাইন চৌধুরী ও কেএম রাশেদুজ্জামান রাজার হাইকোর্ট বেঞ্চ ড. গোলাম মাওলাকে অব্যাহতি দেওয়ার ওই আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চান কেন ওই আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে না। আরএমপি কমিশনার ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতিকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।

ওই আদেশের পর সোমবার ড. গোলাম মাওলা তার অনুসারী প্রাক্তন কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে কলেজে যান। সঙ্গে নিয়ে যান হাইকোর্টের আদেশের কপি। এ সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম কচি কক্ষে তালা দিয়ে রাখেন। পুলিশ কমিশনারের অনুমতি ছাড়া তিনি চাবি দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। চাবি না পেয়ে এ সময় সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা শাবল ও হাতুড়ি এনে অধ্যক্ষের কক্ষের তালা ভেঙে ফেলেন। এরপর ড. গোলাম মাওলাকে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসানো হয়। এ সময় তাকে ফুলেল শুভেচ্ছাও জানানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের আটক করার চেষ্টা করে।

কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের ছিনিয়ে নেন। এ পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ কাউকে আটক না করেই কলেজ থেকে চলে যায়। পুলিশ বলছে, ড. গোলাম মাওলা অবৈধভাবে চেয়ারে বসেছেন। আর ড. মাওলার দাবি, তার কাছে হাইকোর্টের আদেশ আছে।

আরএমপি কমিশনার ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এই প্রতিবেদকের কাছে কিছু ছবি পাঠান। এতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্বাচনের সময় ভোটের প্রচারে অংশ নেন ড. মাওলা। এসব ছবি তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতেই পোস্ট করেছিলেন। পুলিশ কমিশনার জানান, এসব কারণেই ছাত্র-জনতা তাকে কলেজে রাখতে দেয়নি।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘হাইকোর্ট শুধু একটা রুল জারি করেছেন যে কেন অব্যাহতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে না। হাইকোর্ট আমাকে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছেন জবাব দিতে। এই সময়ের মধ্যে আমরা জবাব দেব। কিন্তু ড. গোলাম মাওলা বহিরাগতদের নিয়ে গিয়ে তালা ভেঙে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেছেন।’

তিনি বলেন, ‘শুধু তা-ই নয়, তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছেন। এ জন্য আমরা মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাদী হয়ে মামলা করছেন।’

জানতে চাইলে ড. গোলাম মাওলা দাবি করেন, হাইকোর্ট যেহেতু অব্যাহতির আদেশ স্থগিত করেছেন, সেহেতু তিনিই অধ্যক্ষ। এ জন্যই তিনি কলেজে গিয়েছেন। এখন মামলা হলে তিনি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করবেন।

তিনি বলেন, ‘আমাকে কলেজে বসতে না দিয়ে আদালত অবমাননার মতো ঘটনা ঘটেছে। আমিও বিষয়টি আদালতের নজরে আনব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো দেখুন..
এক ক্লিকে বিভাগের খবর