তানোরে সন্তানদের মারপিটে বৃদ্ধ বাবা-মা আহত, হাসপাতালে ভর্তি
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় জমি লিখে না দেওয়ায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে তিন ছেলে পুত্রবধূসহ তাদের লোকজন মিলে মারপিট করে আহত করছে। পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করে আহত বৃদ্ধ বাবা-মাকে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে তানোর উপজেলার রায়তান বড়শো গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, কুরবান আলী (৮০) ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৭০)। এ বিষয়ে তিন ছেলে পুত্রবধূসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে তানোর থানা ও সেনাবাহিনী ক্যাম্প কমান্ডার মোহনপুর ক্যাম্পে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। হাসপাতালে আহত মাতা সুফিয়া জানান, ছেলে জামিরুল ও তার স্ত্রীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। জামিরুল বাড়ি থেকে চলে গেলে এসব হবে না। তাদের ভয়ে বাড়িতেও যেতে পারছিনা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় ৮০ বছরের পিতা কুরবান আলী বেডের এক সাইডে বসে কাতরাচ্ছেন ও তার বয়োবৃদ্ধ স্ত্রী কম্বল জড়িয়ে শুয়ে থেকে কাঁদছেন। তাদের রাসেল নামের নাতিও দাদা-দাদিকে রক্ষা করতে গিয়ে মার খেয়ে বসে থেকে আপসোস করছে। তারা জানান, জমি ও বাড়ি লিখে না দেয়ার কারনে মাঝে মধ্যেই মারপিট করে। মায়ের দুই হাতের কয়েকটি আঙুল মেরে ভেঙে ফেলেছে। গত বুধবারে মায়ের নাকে মুখে মেরেছে। এখনো ঠোঁট কাটা আছে ও নাকের ভিতরে রক্ত লেগে আছে। ৮০ বছরের পিতার বুকের হাড় ভেঙ্গে ফেলেছে। শ্বাসকষ্ট হয় ব্যাপকভাবে। বাম হাত ভেঙেছে ও ডান হাতের আঙ্গুলে প্রচুর আঘাত করেছে, এখনো ফুলে আছে। আর কত নির্যাতন করলে শান্তি পাবে। মাতা-পিতার এমন দৃশ্য মারাত্মক কষ্টকর।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক আগে থেকেই বাবার বাড়ীতে অবস্থানকারী ছোট ছেলে জামিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মাহাফুজা বেগম উক্ত বাড়ী লিখে নেওয়ার জন্য বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে প্রায়ই অত্যাচার করতো। এর আগেও কয়েকবার পুলিশ এসে অত্যাচারকারী ছেলে জামিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মাহাফুজাকে শাসন করে যায়। ঘটনার দিন গত বুধবার দুপুর ২ টার সময় ছেলে জামিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মাহাফুজা বেগম মিলে বৃদ্ধ বাবা-মাকে কোন কারণ ছাড়াই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে ভাতের থালি ফেলে দিয়ে ছেলে, পুত্রবধূসহ তাদের লোক সোহেল রানা মিলে বৃদ্ধ এই দম্পতিকে বেদম মারপিট করে আহত অবস্থায় বাড়িতে আটকে রাখে। এ সময় অপর ২ ছেলে উম্মর আলী (৫০) ও আনারুল ইসলাম (৪৫) উপস্থিত থেকে বৃদ্ধ বাবা-মাকে মারপিট করতে সহায়তা করে। বিষয়টি জানাজানি হলে রাত ৯টার পর তানোর থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তানোর থানার ওসি মিজানুর রহমান মিজান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি সারাদিন শহরে মিটিংয়ে ছিলাম। আহতরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। সুস্থ হলে অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয় নি।
স্থানীয়রা জানান, তাদের দ্বন্দ্ব ফাসাদ দীর্ঘ দিনের। গত বুধবার মারপিটের খবর পেয়ে অনেকে গিয়ে থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কেউ কোন কথা শোনেনা। তবে যেটাই হোক পিতা মাতার গায়ে হাত দেয়া মারাত্মক অন্যায়। এসবের সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার। সন্তানদের এমন কান্ডে হতবাক স্থানীয়রা। সেই সাথে সন্তানদের দৃষ্টান্ত মুলুক শাস্তির দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।