রাজশাহী নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমানের অপসারণের দাবিসহ ১২ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন সোমবার (২০জানুয়ারী) সকাল থেকেই আরো বেগমান হয়। অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা মেইনগেট, একাডেমি ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে ক্যাম্পাস চত্ত্বরে বিক্ষোভ করতে থাকে। প্রশাসনিক ভবনের ভিতরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা ও ক্যাশিয়ার মাহিদুল ইসলাম অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন। বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত এই দুইজন কর্মকর্তা অবরুদ্ধ হয়ে ছিলেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজের অধ্যক্ষা দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বৈরাচারী ও আওয়ামীদোসর। অধ্যক্ষর এমন অনৈতিক ও দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের জন্য কলেজের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তাঁর দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারীতা ও শিক্ষার্থীদের প্রতি বিরূপ আচরণ প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামগত উন্নয়নকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যার ফলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম এবং ঐতিহ্য ক্ষুন্ন হচ্ছে। অধ্যক্ষের অপশাসনের ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
এসময় শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষর অপসারণসহ ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো:
১. ১৭ই জুলাই থেকেই আওয়ামীদোসর অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমান রাজশাহী নার্সিং কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামীলীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্তা করেছেন। ৫ই আগস্টের পর থেকেই তিনি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে আসছেন। শিক্ষার্থীদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।
আওয়ামীলীগের নেত্রী পালিয়ে যাওয়ার পরেও তার প্রেতাত্মারা আজও আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমরা রাজশাহী নার্সিং কলেজের দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বৈরাচারী ও আওয়ামীদোসর অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে একদফা দাবি ঘোষণা করছি। পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ী ২০শে জানুয়ারি দুপুর ১২টায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে, কলেজের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
২. হোস্টেল পরিদর্শনের নামে বিনা অনুমতিতে মেয়েদের কক্ষে প্রবেশ করেন। এতে মেয়েদের গোপনীয়তা বিনষ্ট হয় এবং মেয়েরা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
৩. কলেজের আর্থিক তহবিলের অপব্যবহার, অনৈতিকভাবে টাকা গ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ।
৪. কলেজের নীতিমালা ও নিয়মাবলি উপেক্ষা করে, ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।
৫. তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম বিদ্বেষমূলক আচরণ করে থাকেন। ৬. অপরিকল্পিত এবং পাঠদানের প্রতি অবহেলার কারণে তার বিষয়ে প্রতিবছর সর্বোচ্চ সংখ্যক অকৃতকার্যের হার। ৭. সর্বদা শিক্ষার্থীদের প্রতি অসহযোগীতামূলক আচরণ। ৮. কলেজ এবং শিক্ষার্থীদের কোনো অনুষ্ঠান এবং অন্য কোনো কর্মসূচিতে সরকারি তহবিল থেকে কোনোরকম অর্থ সহযোগীতা করেন না এবং সেসব বিষয়ে সরকারি তহবিল থেকে কোনোরকম অর্থ বরাদ্দ হয়না বলে শিক্ষার্থীদের সাথে মিথ্যাচার করেন। ৯ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকম হুমকি দিয়ে থাকেন।
১০. ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ১২ দফা দাবিতে স্বাক্ষর করলেও তা বাস্তবায়নে কোনোপ্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করেননি এবং প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম মিথ্যাচার ও তালবাহানার আশ্রয় নিয়ে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ১১. অধ্যক্ষের হাতে রাজশাহী নার্সিং কলেজের সকল শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ। ১২. শিক্ষার্থীরা কলেজ এবং হোস্টেল কেন্দ্রিক কোনো সমস্যায় পড়লে অধ্যক্ষ বরাবর বারবার দরখাস্ত লিখলেও কোনো সমস্যার সমাধানে আশানুরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না, বরং হেয় প্রতিপন্ন করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম জানান, আমাদের এই আন্দোলন ১৭ই জুলাই থেকেই শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের এই আওয়ামীদোসরের পদত্যাগের আন্দোলনকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করার জন্য নিছক একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কোনো প্রকার গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই শিক্ষার্থী।