শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন

‘সামনে আরও বহু ঘটনা ঘটবে’

অনলাইন ডেঙ্ক / ৩৫ দেখেছেন:
আপডেট : সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নতুন বাংলাদেশের ভেতরে যারা গণ্ডগোল সৃষ্টি করতে পারে, তাদেরও নিশ্চিহ্ন করার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমাদের এক সঙ্গে থাকতে হবে। কতো ঘটনা ঘটে গেলো, সামনে আরও বহু ঘটনা ঘটবে। যাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা সহজে মেনে নেবে না।

অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দিতে শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ২১টি জুলাই শহীদ পরিবার ও সাত জন আহতের মধ্যে আর্থিক চেক হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা।

এ সময় তিনি বলেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আজ নতুন বাংলাদেশ বলতে পারছি, তাদের জন্য দেশ কী করতে পারে, তাতে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের জনগণের যে জবাবদিহি, আরেকটা পরিবর্তন, সেটা কোনও নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না। আপনার ছেলে, সন্তান, ভাই ইতিহাসের স্রষ্টা। ইতিহাসের স্রষ্টাকে সাধারণ মাপকাঠি দিয়ে, টাকা-পয়সা দিয়ে মাপা যায় না।

তিনি বলেন, যে বাংলাদেশকে আমরা নতুন বাংলাদেশ হিসেবে তৈরি করলাম, এটা যাতে সেভাবে রাখতে পারি। এটাকে হেলায় ফেলে দিলে হবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের সার্বক্ষণিক সাবধান থাকতে হবে, নজর রাখতে হবে। সেই দায়িত্ব আমাদের সবাইকে মিলে নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে নিহত তিনজনের পরিবার ও তিনজন আহত ব্যক্তি নিজেদের অভিব্যক্তি তুলে ধরে। তারা হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, আর্থিক সহযোগিতা ও পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শহীদ পরিবার ও আহতের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আজ থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরেও আপনাদের দায়িত্ব সমাজের সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। সব হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিচার তাৎক্ষণিক করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। বিচারের মূল জিনিসটা হলো, সুবিচার হতে হবে; অবিচার যেন না হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাৎটা থাকল কোথায়! আমরা অবিচারে নামব না। দেশে কোনো সহিংসতা ও হানাহানি যেন না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হতাহতদের জন্য সরকারের নেয়া কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে অভিহিত হবেন। আহতরা অভিহিত হবেন ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে। প্রতিটি শহীদ পরিবার এককালীন পাবে ৩০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা।

এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি সব শহীদ পরিবারকে মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা দেয়া হবে। শহীদ পরিবারের সদস্যরা সরকারি-আধাসরকারি চাকরিতে পাবেন অগ্রাধিকার।

‘জুলাই যোদ্ধারা’ দুটি মানদণ্ডে চিকিৎসা পাবেন। গুরুতর আহতদের ‘ক্যাটাগরি এ’ অনুযায়ী এককালীন ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) দেওয়া হবে ২ লাখ টাকা। তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে।

গুরুতর আহতরা মাসে মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতাও পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসাসেবা পাবেন। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ থাকলে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে দেশের বাইরে। তারা কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধাও পাবেন।

‘ক্যাটাগরি বি’ অনুযায়ী জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এক লাখ এবং পরের অর্থবছরের দেওয়া হবে ২ লাখ টাকা। তারা মাসে ভাতা পাবেন ১৫ হাজার টাকা। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সরকারি-আধাসরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকারও পাবেন তারা।

জুলাই যোদ্ধাদের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। তারা পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন সুবিধা নিতে পারবেন। এখন পর্যন্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন ‘শহীদের তালিকা’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। আহতদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো দেখুন..
এক ক্লিকে বিভাগের খবর