বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন

সুইসাইড নোট লিখে যুবকের আত্মহত্যা, ভারতের পণ আইন নিয়ে প্রশ্ন

অনলাইন ডেক্স / ৩৬ দেখেছেন:
আপডেট : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

গত ৯ ডিসেম্বর রাতে ভারতের ৩৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। তার দেহের পাশে ছিল একটি প্ল্যাকার্ড, যাতে লেখা ছিল ‘ন্যায়বিচার বাকি আছে’।

অতুল সুবাস নামে ওই ব্যক্তি একটি ২৪ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট এবং ৮১ মিনিটের একটি ভিডিও রেখে গেছেন, যেখানে তিনি তার বিয়ে এবং বিবাহ বিচ্ছেদের সমস্যাকে দায়ী করেছেন।

ভিডিও ও চিঠিতে তার জীবনের বেদনাদায়ক বিবরণ উঠে এসেছে, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরু শহরের এই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার তার স্ত্রী নিকিতা সিংহানিয়া, তার মা এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে ক্রমাগত হয়রানি এবং নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। যদিও তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আদালত তাদের ১৪ দিনের জন্য রিমান্ডে পাঠায়।

সুবাসের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পুরুষ অধিকারকর্মীদের সক্রিয় করেছে এবং ভারতের কঠোর পণ আইন নিয়ে একটি বৃহত্তর বিতর্ক শুরু হয়েছে।

অনেকেই বলছেন, বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ায়, মহিলারা এই আইনকে স্বামীর হয়রানি এবং আত্মহত্যায় বাধ্য করার জন্য ব্যবহার করছেন। ভারতের শীর্ষ আদালতের এক বিচারপতি এই আইনের অপব্যবহারকে ‘আইনি সন্ত্রাস’ বলে অভিহিত করেছেন, যা ‘রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করা উচিত, অস্ত্র হিসেবে নয়’।

তবে নারীর অধিকারকর্মীরা বলছেন, পণ এখনো প্রতি বছর হাজারো নারীর মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে।

২০১৯ সালে সুবাস এবং সিংহানিয়া বিয়ে করেছিলেন, তবে তারা তিন বছর ধরে আলাদা থাকতেন। সুবাস অভিযোগ করেন, তিনি তাদের চার বছরের ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তার স্ত্রী তার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ দায়ের করেছেন বলে দাবি করেন, যেখানে তাকে নির্যাতন, পণ চাওয়া এবং অন্যান্য অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ভিডিওতে সুবাস সিংহানিয়া পরিবারকে ‘চাঁদাবাজি’ করার অভিযোগ তোলেন এবং দাবি করেন তারা মামলা প্রত্যাহারের জন্য ৩ কোটি টাকা এবং ছেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছেন। এছাড়া মাসিক খরচ ৪০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা বাড়ানোর দাবি করেন।

সুবাস আরও বলেন, তিনি গত কয়েক বছর ধরে অসংখ্যবার আদালতে হাজির হয়েছেন এবং একজন বিচারকের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ আনেন। ওই বিচারক তাকে ঘুষ চেয়েছেন এবং অপমান করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে বিচারক এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন, অনৈতিক এবং মানহানিকর’ বলে উল্লেখ করেন।

সুবাসের আত্মহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সুবাসের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করেন।

তারা বলেন, এই আত্মহত্যা হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং সিংহানিয়াকে গ্রেপ্তার করে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া উচিত।

এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ হাজারো মানুষ সিংহানিয়ার কর্মস্থলকে ট্যাগ করে তার চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানান।

বিক্ষোভের পর বেঙ্গালুরুর পুলিশ আত্মহত্যা নোটে উল্লিখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ১৪ ডিসেম্বর, সিংহানিয়া, তার মা এবং ভাইকে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সিংহানিয়া সুবাসের বিরুদ্ধে আর্থিক হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেন বলে জানায় টাইমস অব ইন্ডিয়া।

এর আগে, সিংহানিয়া নিজেও তার স্বামীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন। ২০২২ সালে তার বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনে তিনি সুবাস এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে পণ চাওয়ার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, তারা বিয়েতে দেওয়া উপহার নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং অতিরিক্ত ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।

ভারতে ১৯৬১ সাল থেকে পণ নিষিদ্ধ, তবে এখনো কনের পরিবারকে নগদ টাকা, পোশাক এবং গয়না উপহার দেওয়ার চাপ থাকে। একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, ৯০ শতাংশ ভারতীয় বিয়েতে পণ জড়িত এবং ১৯৫০ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে এই অর্থপ্রদান ২৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো অনুসারে, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে ৩৫ হাজার ৪৯৩ কনে নিহত হয়েছেন  অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ২০ জন নারী পণের জন্য প্রাণ হারিয়েছেন। শুধুমাত্র ২০২২ সালেই পণের কারণে ৬,৪৫০ জন কনে নিহত হন, যা প্রতিদিন গড়ে ১৮ জন।

সিংহানিয়া দাবি করেন, বিয়ের পর সুবাসের বাবা-মা তার বাবার কাছে টাকা চাইলে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এছাড়া তিনি অভিযোগ করেন, সুবাস তাকে হুমকি দিতেন, মদ্যপ অবস্থায় মারধর করতেন এবং দাম্পত্য সম্পর্কের সময় অস্বাভাবিক যৌন আচরণ করতেন। তবে সুবাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো দেখুন..
এক ক্লিকে বিভাগের খবর